
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করছে। এর প্রভাবে উপকূলে শুরু হয়েছে বাতাস ও বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মোখা আরও উত্তর বা উত্তর–পূর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ রোববার বিকেলের মধ্যেই এটি কক্সবাজার ও উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম শেষ করবে। আজ সকাল পৌনে ১০টায় দেওয়া ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় আবহাওয়া অফিস।
আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি বর্তমানে কক্সবাজার–উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল নাগাদ মিয়ানমারে সিটুয়ের কাছে দিয়ে কক্সবাজার–উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রহমান আজ প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুর ১২টার পর কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঝোড়ো হাওয়া ও ব্যাপক বৃষ্টি হতে পারে। আর বিকেলের মধ্যে মোখার উপকূল অতিক্রম শেষ হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর কাছের দ্বীপ ও চরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আর উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এগুলো কাছের দ্বীপ ও চর ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এসব এলাকার কাছের দ্বীপ ও চরে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটার) বৃষ্টি হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোনো কোনো স্থানে ভূমিধস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।